তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আশাকরি আপনি আল্লাহর তায়ালার রহমতে ভালো আছেন। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামাজ। অনেকেই জানতে চান তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম কি?তাহাজ্জুদ নামাজ কখন পড়তে হয় ? তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত ? Tahajjud Namaj কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয় ইত্যাদি। তাই এই পোস্টার মাধ্যমে তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য শেয়ার করবো।
বিনা হিসাবে জান্নাতে যেতে পারবে, তাদের মধ্যে একশ্রেণীর মানুষ হলেন তারা যারা যত্ন ও মনোযোগ সহকারে এবং খুশি মনে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন। কুরআনের বিভিন্ন সূরায় এ নামাজের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাহাজ্জুদ নামাজ নফল ইবাদাত গুলোর মধ্যে শ্ৰেষ্ঠতম। এই নামাজ ঘুম ত্যাগ করে গভীর রাতে পড়তে হয় তাই আল্লাহ এর প্রতিদানও বেশি দিয়ে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় নবী (সাঃ) কে এই নামাজ পড়তে বিশেষ ভাবে নিৰ্দেশ দিয়েছেন। নবীজিকে সম্বোধন করে আল্লাহ তায়ালা বলেন , ‘রাত্রির কিছু অংশ কোরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্য অতিরিক্ত। হয়ত বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করবেন (মাকামে মাহমুদ পৌঁছাবেন )। [সূরা – ১৭ বনি ইসরাইল, আয়াত :৭৯] এই নামাজকে ‘সালাতুল লাইল’ বা ‘কিয়ামুল লাইল’ নামাজ ও বলা হয়।
তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক সময় কখন ?
সবার মনেই একটা সন্দেহজনক প্রশ্ন থাকে যে , তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক সময় কখন ? এর উত্তর হচ্ছে এশার সালাতের পরে বা রাতের দুই – তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে তাহাজ্জুদ নামাজের সময় শুরু হয়। তবে অর্ধ রাতের পর থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ভালো। শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম। রাত ৩-৪ আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করা সবচেয়ে সঠিক সময়। তাহাজ্জুদ নামাজ একা পড়াই উত্তম। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন , রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘ফরজ নামাজের পর সকল নফল নামাজের মধ্যে শ্ৰেষ্ঠ হলো তাহাজ্জুদ নামাজ তথা রাতের নামাজ। (মুসলিম ,তিরমিজি নাসাঈ)। তবে , ফজরের ওয়াক্ত শুরু হলেই তাহাজ্জুদের সময় শেষ হয়ে যায়। ঐ সময় তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করলে হবে না।
আরও পড়ুনঃ অযুর দোয়া ও নিয়ত
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত ?
তাহাজ্জুদ নামাজ ২ থেকে ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়ার বর্ণনা পাওয়া যায়। সর্ব নিম্ন ২ রাকাত আর সর্বোচ্চ ১২ রাকাত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়তেন। তাই ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়াই ভালো। তবে ৮ রাকাতই পড়তে হবে এমন নয়। সম্ভব হলে ১২ রাকাত তাহাজ্জুদ আদায় করতে পারেন। তবে ৮ রাকাত আদায় করা উত্তম। যদি সম্ভব না হয় ৪ রাকাত আদায় করবেন। যদি তাও সম্ভব না হয় অন্তত ২ রাকাত হলেও আদায় করা ভালো।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত কি?
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত ২ ভাবে পড়া যায়। যদি সঠিক ও সহিহ শুদ্ধ ভাবে আরবিতে পড়তে পারেন তাহলে অবশ্যই আরবিতে পড়বেন। যদি মনে করেন আরবিতে ভুল হতে পারে তাহলে অবশ্যই বাংলায় পড়বেন , শুধু শুধু গুনাহ হওয়ার থেকে বাংলায় বলাই ভালো। তাহাজ্জুদ ২ রাকাত নামাজের নিয়তটি হলো :
আরবি : | نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ رَكَعَتِى التَّهَجُّدِ – اَللهُ اَكْبَر |
উচ্চারণ: | নাওয়াইতুয়ান উছাল্লিয়া রাকআতিত্তাহাজ্জুদি আল্লাহু আকবর |
অর্থ : | আমি তাহাজ্জুদের দুই রাকাত নামায পড়ার নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবর |
আরও পড়ুনঃ দোয়া কবুল না হওয়ার কারন
তাহাজ্জুদ নামাজে কোন সূরা পড়তে হবে?
যেকোনো সূরা দিয়েই তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়। যেহেতু তাহাজ্জুদ নামাজ একা পড়াই উত্তম। তাই অন্য সব সুন্নত ও নফল নামাজের মতো তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা কেরাত নিম্ন স্বরে পড়তে হয়। নবী করিম (সাঃ) যথাসম্ভব লম্বা কেরাত ,লম্বা রুকু ও সেজদা সহকারে একান্ত নিবিষ্ট মনে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। তাই লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ আদায় করা উত্তম। তাহাজ্জুদ নামাজে – সূরা মুজাম্মিল , সূরা মুদ্দাচ্ছির, সূরা মুলক, সূরা ওয়াকিআহ , সূরা দুখান, সূরা আর রহমান, সূরা ইয়াসিন, সূরা হাশর ও সূরা কাহাফ এবং অন্যান্য সূরা তিলাওয়াত করা অত্যন্ত বরকতময় ও ফলদায়ক। তবে আপনি ছোট সূরা ও পড়তে পারেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক নিয়ম?
তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক নিয়ম হলো :
- তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বাধা।
- তার পর ছানা পড়তে হবে।
- সূরা ফাতেহা পড়তে হবে।
- তারপর সূরা মিলানো তথা কেরাত পড়া।
- অন্যান্য নামাজের ন্যায় রুকু, সেজদা আদায় করা।
এভাবে দ্বিতীয় রাকাত আদায় করে তাশাহহুদ, দরূদ ও দোয়া মাছুরা পরে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করতে হবে।
এভাবেই দুই , দুই রাকাত করে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উত্তম।
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
নিচের ভিডিওটি দেখতে আপনি তাহাজ্জুদ সালাতের ফজিলত সম্পর্কে জানতে পারবেন।
শেষ কথা
পরিশেষে কিছু কথা বলি। প্রতি রাতে এ সময় আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দার ফরিয়াদ শোনেন। তাই নফল ইবাদত বিশেষ উদেশ্য বা প্রয়োজন ছাড়া গোপনে পড়াই ভালো। কারো ঘুমের ব্যাঘাত যেন না হয় এবং অন্যকে দেখানোর মন মানসিকতা যেন না থাকে এ বিষয়ে যত্নশীল ও সতর্ক থাকতে হবে। তাহাজ্জুদ নিয়মিত আদায় করতে পারলে তা অতি উত্তম। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে রাতের শেষ প্রহরে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুক। এমনকি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সহিহ শুদ্ধ ভাবে সময় মতো সঠিক ভাবে আদায় করার তৌফিক দান করুক, আমিন।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
এশার সালাতের পরে বা রাতের দুই – তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে তাহাজ্জুদ নামাজের সময় শুরু হয়। তবে অর্ধ রাতের পর থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ভালো। শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম।
তাহাজ্জুদ নামাজ হলো নফল এবং তাহাজ্জুদ নামাজ নফল ইবাদাত গুলোর মধ্যে শ্ৰেষ্ঠতম।
নাওয়াইতুয়ান উছাল্লিয়া রাকআতিত্তাহাজ্জুদি আল্লাহু আকবর
যেকোনো সূরা দিয়েই তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়।