আসসালামু আলাইকুম অর্থ ও সহিহ শুদ্ধভাবে সম্পূর্ণ সালাম শিখেনিন

আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আশা করি মহান আল্লাহ তাআলার রহমতে আপনি ভালো আছেন। আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো আসসালামু আলাইকুম ( Assalamu Alaykum ) শব্দের অর্থ এবং সহিহ শুদ্ধভাবে সালাম দেওয়া ও সালামের উত্তর দেওয়া। তাই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ুন।
আসসালামু আলাইকুম অর্থ?
সালাম অত্যন্ত সহজে পালন যোগ্য একটি ইবাদাত। সালাম দেওয়া সুন্নত এবং সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব তাই আমাদের উচিত সহিহ শুদ্ধভাবে সালাম দেওয়া এবং সালামের জবাব দেওয়া। সহিহ শুদ্ধভাবে সালাম , সালামের জবাব ও সালামের অর্থ নিচে দেওয়া হলো।
আরবি | ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ |
বাংলা | আস-সালামু ʿআলাইকুম |
ইংরেজি | Assalamu Alaykum |
অর্থঃ | “আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক” |

সম্পূর্ণ সালাম এর সঠিক উচ্চারণ
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি, ওয়া বার-কাতুহ্।
وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ
‘ওয়া আলাইকুমুস-সালাম, ওয়া রহমাতুল্লাহি, ওয়া বার-কাতুহ্।
আরবী দেখে সালামের সহীহ শুদ্ধ উচ্চারণ শিখে নেয়া উচিত অন্যথায় কন্ঠ বাদ পড়ে যায়- ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম’-এর পরিবর্তে ‘অলাইকুম আস সালাম’ হয়ে যায়, যা স্পষ্ট ভুল।
সালামের ৯টি ভুল সম্পর্কে জানুন
সালামের অফুরন্ত সওয়াবের কথা হাদিসে রয়েছে অথচ এই ছোট্ট আমলটি করতে গিয়ে আমরা ৯, ৯ টি ভুল করে থাকি। সালামকে কেন্দ্র করে যে ভুল গুলো হয়ে থাকে তা নিচে দেয়া হলো।
১. সালাম দিতে অহংকার বোধ করা
অনেকে অহংকার বসত সালাম দিতে চাননা। রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন যে ব্যক্তি সবার আগে সালাম দিয়ে দেন তিনি অহংকার থেকে মুক্ত।
২. বিকৃত বা অশুদ্ধ ভাবে সালাম দেওয়া
অনেকেই স্লামালাইকুম, আস সালামালাইকুম, সেলামালাইকুম, ইত্যাদি বিকৃতভাবে সালাম দিয়ে থাকেন। একজন ইহুদি আমাদের নবী করিম (সা.) কে বিকৃত উচ্চারণে সালাম দিয়ে বলেছিলেন আসসামু-লাইকুম। যার কারণেই আমাদের আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি, ওয়া বার-কাতুহ্ এভাবে বিশুদ্ধ উচ্চারণে সালাম দিতে হবে। তাছাড়া আস-সালাম আল্লাহর গুণবাচক নাম। আল্লাহর গুণবাচক নামটি আমাদের বিশুদ্ধ ভাবে শিখা উচিত।
৩. সালামের জবাব না দিয়ে শুধু মাথা নাড়ানো
অনেকেই সালামের জবাবে পাল্টা সালাম না দিয়ে শুধু মাথা নাড়িয়ে সাই দিয়ে থাকে। কেউ আপনাকে মুখে সালাম দিলে আপনাকে মুখে পাল্টা জবাব দিতে হবে এবং শুনিয়ে জবাব দিতে হবে এটি ওয়াজিব। সালাম দেওয়া সুন্নত হলেও সালামের জবাব দেওয়া ওয়াজিব এবং আবশ্যক, সালামের জবাব না দিয়ে শুধু মাথা নেড়ে সাই দেওয়া গুনাহের কাজ হবে অনেকে অহংকার বসত এই কাজটি করে থাকে।
৪. অপরিচিত লোককে সালাম না দেওয়া
আমরা অনেকেই শুধু চেনা জানা লোক কে সালাম দিয়ে থাকি অথচ রাসুলে করিম (সা.) বুখারী বর্ণিত হাদিসে উত্তম ইসলামের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন ঐ মুসলিমের ইসলাম হলো উত্তম এবং উৎকৃষ্ট ইসলাম যে মুসলিম পরিচিত অপরিচিত চেনা অজানা সকল মানুষকে সালাম দিয়ে থাকে। অতএব আমাদের পাশদিয়ে কেউ হেঁটে গেলে অথবা আমাদের কাছে কেউ আসলে অথবা আমরা কারো মুখোমুখি হলে পরিচিত অথবা অপরিচিত হলেও তাকে সালাম দিতে হবে।
৫. পরিবারের সদস্যদের সালাম দিতে ইতস্ততা বোধ করা
আমরা অনেকেই স্ত্রী ,সন্তান ,মা বাবা, এবং আপন ভাই বোনদের সালাম দিতে ইতস্তত বোধ করি। বাইরের লোকদের আমি সালাম দেই বা না দেই পরিবারের লোকদের আরো বেশি করে গুরুত্বের সাথে সালাম দেওয়া উচিত কারণ সালাম মানে শান্তির দোয়া নিজের পরিবারের জন্য শান্তির দোয়া সবার আগে করা উচিত।
৬. সালামের ধারাবাহিকতায় খেয়াল না করা।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে ব্যক্তি আগন্তুক বাহির থেকে আসবেন তিনি অপেক্ষমান মানুষদের সালাম দেবেন। যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তিনি বসা ব্যক্তিকে সালাম দেবেন। অতএব এ ধারাবাহিকতা লক্ষকরা উত্তম যদিও এই ধারাবাহিকতা ক্ষুন্নকরে বসা ব্যক্তি আগে সালাম দিয়ে দেন এতে কোনো পাপ হবে না কিন্তু উত্তম হলো ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করে সালাম দেওয়া।
৭. পা ছুঁয়ে সালাম করা
আমরা অনেকেই মনে করি সালাম দিতে হলে বিশেষ করে শশুর বাড়ির লোকদেরকে এবং খুব বেশি গুণীজনদের কে শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিদেরকে সালাম দিতে হলে পায়ে হাত দিয়ে সালাম দিতে হবে এটি একটি ভুল ধারণা মূলত সালাম মুখে উচ্চারণ যোগ্য একটি ইবাদত। আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি, ওয়া বার-কাতুহ্ আমরা এটা মুখে বলতে পারি বা লিখতে পারি এছাড়া শরীরে কোনো অংশে স্পর্শ করা এটা সালামের কোনো অংশ নয় বরং এটি অপসাংস্কিতির অংশ যেটি পদধূলি নেওয়া বা কদমমুছি নেওয়া থেকে পা ছুঁয়ে সালাম প্রচলিত হয়েছে।
৮. সালাম দেওয়ার সময় হাত উঁচু করা
অনেকেই সালাম দিলেই সংক্রিয় ভাবে হাত তুলে থাকেন অর্থাৎ সালাম মুখে উচ্চারণ করছে পাশাপাশি হাত উত্তোলন করে ইশারা দিচ্ছেন। হাত তোলা সালামের জন্য কোনো আবশ্যিক বিষয় নয় বরং সালাম মুখে উচ্চারণ যোগ্য একটি ইবাদত বা লিখার মতো একটি ইবাদত হাত উত্তোলন করার সাথে সালামের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে হ্যাঁ কেউ যদি অনেক দূরে থাকেন অথবা দূরদিয়ে খুব দ্রুতভাবে হেটে যাচ্ছে আপনার সালাম নাও শুনতে পারে সে ক্ষেতে হাত উত্তোলন করে আপনি ইশারা দিতে পারেন।
৯. সালাম দেওয়ার পর বুকে হাত দেয়া
অনেকেই সালাম দেওয়ার পর সক্রিয় ভাবে তার হাত বুকের কাছে চলে আসে এবং নিয়মিত এটি করতে থাকেন এটিও ভুল সালাম মুখে উচ্চারণ যোগ্য অথবা লিখার মতো একটি ইবাদাত এর সঙ্গে শরীরের কোনো অংশের নিজের বুকে ইত্যাদিতে স্পর্শ করার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে হ্যাঁ বিচ্ছিন্ন ভাবে মাঝে মধ্যে কারো প্রতি ভালোবাসা বা ভক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে যদি বুকে হাত দিয়ে যদি তাকে বোঝানো হয় তাহলে সেটি ভিন্ন কথা হবে।
আরও পড়ুনঃ ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কি? কখন ওযু করা ফরজ?
শেষ কথা
উপরে শেয়ার করা তথ্যে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে দয়া করে তা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। মহান আল্লাহ তাআলা আপনাদের সহি শুদ্ধভাবে সালাম দেয়ার তৌফিক দিক আমিন। সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।