আপনি যদি বিকাশ একাউন্টের লক খোলার নিয়ম জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ুন।
আজকের আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়লে আপনারা বিকাশ একাউন্টের লক খোলার নিয়ম ও বিকাশ একাউন্ট লক হওয়ার কারণ ও করণীয় কি কি সেই বিষয়ে সম্পূর্ণ জানতে পারবেন।
বিকাশ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ডিজিটাল পেমেন্ট লেনদেন সিস্টেম। এবং এটি লক্ষ লক্ষ মানুষের টাকা লেনদেনের কাজকে সহজ করে দিয়েছে। বিকাশের মাধ্যমে, আমরা খুব সহজেই এবং অল্প সময়ে টাকা পাঠাতে এবং গ্রহণ করতে, যেকোনো ধরনের বিল পরিশোধ করতে, এবং অনলাইন থেকে শপিং করতে পারি কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই। তবে যেহেতু বিকাশ একটি ডিজিটাল লেনদেন সিস্টেম তাই, বিকাশ একাউন্টের ও কিছু ডিজিটাল সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন অ্যাকাউন্ট লক হয়ে যাওয়া। বিকাশ একাউন্ট লক হয়ে যাওয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীর জন্য একটি বিশাল হতাশাময় পরিস্থিতি। তবে আপনি চাইলে কিছু স্টেপ পূরণ করেই আপনার বিকাশ একাউন্টটি আনলক করতে পারেন। আজকের এই আর্টিকেলে আমি, বিকাশ একাউন্ট লক হওয়ার কারণগুলি কি কি ও লক হলে করনীয় কি কি? এবং বিকাশ একাউন্টের লক খোলার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব। তো চলুন দেখে নেওয়া যাক।
বিকাশ একাউন্ট লক হওয়ার কারণ ও করণীয়
বকেয়া পেমেন্ট বা ঋণের জন্য চেক করা: আপনি যদি দেখেন যে আপনার বিকাশ একাউন্টটি লক হয়ে গেছে তাহলে সর্বপ্রথম আপনার উচিত হবে যে আপনার বকেয়া পেমেন্ট বা ঋণের বিষয়টি চেক করে নেওয়া। আপনি যদি বিকাশের কাছে কোনো বকেয়া বা ঋণ নিয়ে সেটি পরিশোধ না করে থাকেন তাহলে এটি পরিশোধ করা পর্যন্ত আপনার বিকাশ একাউন্টটি লক করা হবে। বিকাশের নিরাপত্তার জন্য তারা এটি করে থাকেন।
আপনার কোন বকেয়া পেমেন্ট বা ঋণ শোধ করা বাকি আছে কিনা তা যদি চেক করতে চান তাহলে প্রথমে বিকাশ অ্যাপ এ লগইন করতে হবে। তারপর লেনদেন অপশনে যেতে হবে। তারপরে এখানে চেক করতে হবে যে এখানে কোন লেনদেন অসম্পূর্ণ বা আটকে আছে কিনা। যদি কোনো লেনদেন অসম্পন্ন দেখতে পান তাহলে, আপনার বিকাশ একাউন্টটি আনলক করার জন্য সবার আগে এই লেনদেনটি আপনাকে সম্পূর্ণ করতে হবে।
বিকাশ কাস্টমার সাপোর্ট এ যোগাযোগ করুন: আপনার বকেয়া পেমেন্ট বা ঋণ চেক করার পর আপনি যদি কোন অসম্পূর্ণ পেমেন্ট খুঁজে না পান, তাহলে আপনার পরবর্তী স্টেপ হবে বিকাশ কাস্টমার সাপোর্ট বা হেল্পলাইনে যোগাযোগ করা। তারপর তারা আপনাকে আপনার বিকাশ একাউন্টটি লক হওয়ার কারণ সম্বন্ধে বলবে এবং কিভাবে অ্যাকাউন্ট আনলক করতে হয় সেই সম্বন্ধেও বলে দিবে।
বিকাশ কাস্টমার সাপোর্ট এ যোগাযোগ করার জন্য আপনাকে বিকাশের ওয়েবসাইটে যেতে হবে। এবং তারপরে contact us পেজে যেতে হবে। তারপর সেই পেজে আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করার কিছু মাধ্যম পাবেন যেমন: ইমেইল ফোন নাম্বার লাইভ চ্যাট। তারপরে আপনি সেখানে কাস্টমার সাপোর্ট এর সাথে যোগাযোগ করে আপনার সমস্যাটি আলোচনা করুন। তারা আপনাকে আপনার একাউন্টি আনলক করার স্টেপ গুলি বলে দিবে।
সঠিক তথ্য পরিচয় প্রদান করুন: কিছু ক্ষেত্রে, বিকাশ আপনার একাউন্টটি আনলক করার জন্য আপনার তথ্য পরিচয় যাচাই করতে পারে। যেমন: আপনার একাউন্টটি যেই আইডি কার্ড দিয়ে খোলা সেই আইডি কার্ডের তথ্য, আপনার বিকাশ একাউন্ট ব্যবহার করে লেনদেন এর তথ্য।
বিকাশ কাস্টমার সাপোর্ট আপনার পরিচয় যাচাই করার জন্য ডকুমেন্ট এর তথ্য চাইলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেটি তাদেরকে দেওয়ার চেষ্টা করুন। ডকুমেন্ট হিসাবে আপনার বিকাশ একাউন্টটি যেই আইডি কার্ড দিয়ে খোলা সেটির তথ্য চাইবে। আপনার ডকুমেন্ট বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমন: আপনার ভোটার আইডি কার্ড, স্মার্ট কার্ড, পাসপোর্ট, অন্যান্য সরকার প্রদত্ত কোন পরিচয় পত্র। অনেক ক্ষেত্রে আপনার ঠিকানা ও প্রমাণ করার প্রয়োজন হতে পারে। এইরকম ক্ষেত্রে আপনার বাড়ির ট্যাক্স পেপার প্রয়োজন পড়তে পারে।
আপনার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা: অনেক সময় আপনার বিকাশ একাউন্ট কোনো নিরাপত্তা সিকিউরিটির কারণে লক হয়ে যেতে পারে যেমন: হ্যাকিং, বারবার পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করার চেষ্টা। যদি এইরকম কোন সমস্যার কারণে আপনার বিকাশ একাউন্টটি লক হয়ে থাকে তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার বিকাশ একাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন। ফলে আপনার বিকাশ একাউন্টটি আগের থেকে আরও নিরাপদ হবে এবং হ্যাকিং এর হাত থেকে বাঁচার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
আপনার বিকাশ একাউন্ট এর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করার জন্য, আপনার বিকাশ অ্যাপ এ লগইন করুন। তারপর মেনু থেকে সেটিং এ যান। তারপর সেখানেই পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করার অপশন পাবেন। এবং পরবর্তী স্টেপগুলো পূরণ করে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে দিন।
আপনি চাইলে *২৪৭# ডায়াল করে ১০ নম্বর অপশন সিলেক্ট করে পরবর্তী নির্দেশনা গুলো ফলো করেও পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে পারে।
আরও পড়ুন: বিকাশ ক্যাশ আউট চার্জ ও সেন্ড মানি খরচ ২০২৩
সন্দেহজনক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকুন: ভবিষ্যতে আপনার অ্যাকাউন্টটি যেন আর লক না হয় সেজন্য আপনাকে সন্দেহজনক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে হবে। এগুলো হচ্ছে, অন্যের ফোনে আপনার বিকাশ একাউন্ট লগইন করা, যেকোনো থার্ড পার্টি জায়গায় আপনার বিকাশ একাউন্ট এর তথ্য শেয়ার করা, অন্য কাউকে আপনার বিকাশ একাউন্টের পিন বা লেনদেনের তথ্য শেয়ার করা, অন্য কাউকে আপনার বিকাশ একাউন্টের ডকুমেন্ট শেয়ার করা। এবং বিকাশের নিয়ম অমান্য করে এমন কার্যকলাপ আপনাকে এড়িয়ে চলতে হবে।
সন্দেহজনক কার্যকলাপ এড়িয়ে চলতে নিচে কিছু পদক্ষেপ দেওয়া হলো যেগুলো আপনাদের ফলো করতে হবে:
- আপনার বিকাশ একাউন্টে একটি ইউনিক এবং স্ট্রং পিন সেট করুন। এমন কোনো পিন সেট করুন যেটি অন্য কেউ আন্দাজ করতে পারবে না। এবং সহজ পাসওয়ার্ড সেট করা থেকে বিরত থাকুন। সহজ পাসওয়ার্ড যেমন: আপনার জন্ম সাল, আপনার রোল নম্বর, আপনার মোবাইল নাম্বারের শেষের ৪ অক্ষর।
- অযথাই কোন থার্ড পার্টি লিঙ্কে ক্লিক করা থেকে দূরে থাকুন। অযথাই কোন ডাউনলোড লিংকের লোভে পড়ে সেই লিংকে ক্লিক করবেন না। এবং আপনার বিকাশ একাউন্টের পিন চায় এমন কোন জায়গায় আপনার একাউন্টের পিন দিবেন না। এইগুলো সব ফিশিং সাইট। এইরকম কোন সাইটে আপনার একাউন্টের তথ্য দিলে সেই তথ্যগুলো হ্যাকারদের কাছে চলে যাবে। বিকাশ একাউন্টের পিন শুধু *২৪৭# ডায়াল করে এবং বিকাশের অফিশিয়াল অ্যাপস এই দিবেন। এছাড়া অন্য কোন জায়গায় আপনার একাউন্টের পিন দিবেন না।
- আপনার মোবাইলের সব এপস আপডেট রাখুন। এটি আপনার মোবাইলকে হ্যাকিং এর হাত থেকে বাঁচাবে। এবং আপনার মোবাইল হ্যাক না হলে আপনার ফোনেরও কোনো তথ্যই অন্য কেউ নিতে পারবে না যেমন: বিকাশ একাউন্ট এর কোন তথ্য।
- আপনার বিকাশ একাউন্ট এর কার্যকলাপ নিয়মিত চেক করুন। কার্যকলাপ যেমন: একাউন্টের লেনদেনের তথ্য। এবং আপনি যদি কোন এমন লেনদেনের তথ্য দেখেন যেটি আপনি করেননি বা এমন কিছু দেখেন যেটি আপনি করেননি তাহলে সবার আগে আপনার একাউন্টের পিন পরিবর্তন করুন। এবং তারপর কাস্টমার সাপোর্টে যোগাযোগ করুন।
- কাউকে একাউন্টের পিন নাম্বার দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। কাউকে আপনার বিকাশ একাউন্টের পিন দিবেন না। যদি সে বিকাশের কোন লোকও হয় তাও না। কারণ বিকাশ কাস্টমার সাপোর্ট বা তাদের কোন লোক আপনার কাছ থেকে আপনার একাউন্টের পিন চাইবে না।
উপরে বলা সবগুলো স্টেপ মেনে চললে আশা করি আপনারা আর ভবিষ্যতে আপনাদের বিকাশ অ্যাকাউন্ট লক হওয়ার মতো সমস্যায় পড়বেন না। এইবার চলুন দেখে নেওয়া যাক যে আপনাদের বিকাশ একাউন্ট লক হলে তা কিভাবে আনলক করবেন। তো চলুন দেখে নেওয়া যাক বিকাশ একাউন্ট আনলক করার উপায়।
যদি আপনার বিকাশ একাউন্টটি লক হয়ে থাকে তাহলে নিচের স্টেপ গুলো ফলো করে আপনার অ্যাকাউন্টটি আনলক করে নিতে পারবেন।
- প্রথমে আপনার বিকাশ একাউন্টটি যেই ডকুমেন্ট দিয়ে খোলা সেটি হাতের নাগালে রাখুন। ডকুমেন্ট যেমন: ভোটার আইডি কার্ড, স্মার্ট কার্ড, পাসপোর্ট বা সরকারি কোনো পরিচয় পত্র।
- আর আপনার একাউন্টটি আনলক করার জন্য আপনার অতীতে করা লেনদেনের তথ্যের প্রয়োজন পড়তে পারে।
- তারপর বিকাশ কাস্টমার সাপোর্টে কল করুন। যদি বাংলাদেশ থেকে কল করেন তাহলে এই নাম্বারে (১৬২৪৭) কল করতে হবে। আর আপনি যদি বাংলাদেশের বাহিরে থেকে কল করতে চান তাহলে এই নাম্বারে (+8809612111624) কল করতে হবে। অবশ্যই আপনার বিকাশ একাউন্টটির নাম্বার থেকে ফোন করতে হয়।
- তারপর কাস্টোমার এজেন্টের সাথে কথা বলতে হবে। সেখানে তারা আপনার অ্যাকাউন্টের পরিচয় নিশ্চিত করতে বলবে। একাউন্টের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য আপনাদের ডকুমেন্টের তথ্য তাদেরকে দিন। ডকুমেন্টের তথ্য যেমন: আপনার নাম, বয়স, আইডি কার্ডের নাম্বার।
- এবং তারপর তারা আপনার কাছে থেকে আপনার অতীতের লেনদেন সমন্ধেও শুনতে পারেন। এক্ষেত্রে তারা আপনার ৯০ দিনের যেকোনো একটি লেনদেনের তথ্য শুনবে। তবে এ তথ্যটি সঠিক দিতে না পারলে অতটাও সমস্যা হয় না যদি আপনার ডকুমেন্ট ঠিক থাকে।
- তারপর আপনি কাস্টমার এজেন্টকে আপনার একাউন্টটি আনলক করে দেওয়ার অনুরোধ করুন। আপনার সব তথ্য ঠিক থাকলে তারা অবশ্যই আপনার একাউন্টটি আনলক করে দিবে।
- কনফার্মেশন মেসেজ এর জন্য অপেক্ষা করুন। আপনার একাউন্টটি যদি আনলক হয় তাহলে আপনার ফোনে একটি মেসেজ আসবে। এবং তারপর থেকে আপনি আবার আপনার একাউন্টটি অ্যাক্সেস করতে পারবেন।
- এই উপায়ে যদি আপনার একাউন্টটি আনলক না হয় তাহলে, আপনাকে আশেপাশের কোনো কাস্টমার অফিসে যেয়ে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে। আপনি অবশ্যই সেখান থেকে আপনার সমস্যাটির সমাধান পাবেন। কাস্টমার অফিসে যাওয়ার সময় চেষ্টা করবেন যার আইডি কার্ড দিবে একাউন্টটি খোলা তাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে।
আরও পড়ুন: বিকাশ কাস্টমার কেয়ার নাম্বার এবং বিকাশ লাইভ চ্যাট
পরামর্শ
তো এই ছিল বিকাশ একাউন্ট আনলক করার উপায়। আশা করি আপনাদের কাজে দিবে। আর আপনার বিকাশ একাউন্টটি আনলক করার পর ভবিষ্যতে যেন আর আপনার বিকাশ একাউন্টটি লক না হয় সেইদিকে লক্ষ্য রাখবেন। সেজন্য আমার দেওয়া টিপস গুলো অবশ্যই মেনে চলবেন। তো আজকে এই পর্যন্তই, আশা করি আপনারা উপকৃত হয়েছেন। আল্লাহ হাফেজ।