যোহরের নামাজ কত রাকাত, নিয়ত কিভাবে পড়তে হয়?

ইসলামের পাঁচটি স্তরের মধ্যে নামাজ একটি। নামাজ ফরজ ইবাদত। নামাজ কায়েমকারী ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার মাধ্যমে কাজে সফলতা পাওয়া যায় এবং দৈনন্দিন জীবন সুখের হয়ে ওঠে। আমাদের প্রত্যেকের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেই হবে। আজকের আর্টিকেলে আমি যোহরের নামাজ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে যোহরের নামাজ কত রাকাত ও কি কি? যোহরের নামাজ কিভাবে পড়তে হয়? যোহর নামাজের নিয়ত। তো চলুন বিস্তারিত আলোচনা শুরু করা যায়।
যোহরের নামাজ কত রাকাত?
দুই রাকাত নফল নামাজ সহ যোহরের নামাজ ১২ রাকাত। শুক্রবারে জোহরের নামাজের পরিবর্তে জুমার নামাজ আদায় করা হয়। প্রথমে চার রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ে নিতে হবে। তারপরে চার রাকাত ফরজ নামাজ পড়তে হবে। এবং সর্বশেষে আবার দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়তে হবে। সর্বশেষ দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ার পর অনেকেই আবার দুই রাকাত নফল নামাজও আদায় করেন। আপনি চাইলে শুধু দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়তে পারেন এতে আপনার যোহরের নামাজ আদায় হবে। দুই রাকাত নফল নামাজ পড়লে বাড়তি সওয়াব পাবেন। যোহরের নামাজ কত রাকাত এবং কি কি আশা করি তা বুঝতে পেরেছেন।
যোহরের নামাজ কিভাবে পড়তে হয়?
যোহরের নামাজ।চার রাকাত সুন্নত ও ফরজ: প্রথমে জায়নামাজে দাঁড়াবেন এবং জায়নামাজের দোয়া পড়বেন।(ইন্নি উয়াজ্জাহতু উয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাসসামাওয়াতি উয়াল আরদ্বি হানিফা উয়ামা আনা মিনাল মুশরিকিন) ।
প্রথম রাকাত:
তারপর নিয়ত বলে রাকাত বাঁধবেন। দুই হাত কাধ বরাবর রাখবেন। এমনভাবে রাখবেন যাতে হাতের তালু দুইটি কাবার দিকে থাকে। তারপর হাত নাভির উপরে অথবা নিচে রাখতে হবে এবং পড়তে হবে।(সুবহানাকা আল্লাহুম্মা বিহামদিকা উতাওয়া রাকাসমুকা উয়াতায়ালা জাদ্দুকা উয়ালা ইলাহা গাইরুক)
তারপর সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।(আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আররাহমানির রাহিম, মা-লিকিয়াউ মিদ্দিন, ইয়া কানা’ বুদু উয়া ইয়া কানাসতায়িন, ইহদিনাসসিরাতাল মুস্তাকিম, সইরা ত্বাল্লাজিনা আন আম তায়ালাইহিম, ঘাইরিল মাগদু বিয়ালাইহিম, উয়ালাদ্দুয়াল্লিন) তারপর যেকোনো একটি সূরা পড়তে হবে।
তারপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যাবেন। রুকুতে পড়তে হবে (সুবহানা রাব্বিয়াল আযিম(তিনবার উত্তম, বেশি পড়লে বেশি সওয়াব পাবেন)।সামিয়াল্লাহুলিমান হামিদা বলে রুকু থেকে উঠবেন। তারপর আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যাবেন।
সেজদায় পড়তে হবে (সুবহানা রাব্বিয়াল আলা) তিনবার পড়া উত্তম বেশি যত পরবেন তত সওয়াব পাবেন। আল্লাহু আকবার বলে সেজদা থেকে উঠে বসতে হবে এবং আবার আল্লাহু আকবার বলে সেজদায় যেতে হবে। এভাবে আমাদের প্রথম এক রাকাত শেষ হবে।
দ্বিতীয় রাকাত
প্রথম রাকাতের মতই দ্বিতীয় রাকাতের নামাজ পড়তে হবে। কিন্তু দ্বিতীয় সেজদার পর আমরা যে উঠে দাঁড়াই সেখানে আমাদের আবার বসতে হবে একে বলা হয় মাঝ বৈঠক। মা বৈঠকে পড়তে হবে (আত্তাহিয়াতু লিল্লাহি উয়াসসালাউয়াতু উয়াত্তাইয়িবাতি আসসালামু আলাইকা আইয়ু হান্নাবিয়ু উউয়া রাহমাতুল্লাহি উয়া বারাকাতুহু আসসালামু আলাইনা আলা ইবাদিল্লাহিস সুয়ালিহিন, আসহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহু উয়া আসহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদু হুয়া রাসুলুহু)প্রতিয়মান আসহাদু আল্লআহ ইলাহা বলে শাহাদাত আঙ্গুলি উপরের দিকে ধাবমান করতে হবে। তারপর দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
তৃতীয় রাকাত
তৃতীয় রাকাতে শুধু সুরা ফাতিহা পড়ে রুকু ও সিজদাহ করতে হবে। রুকু সিজদা করে আবার দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
চতুর্থ রাকাত
সুরা ফাতিহা পড়ে রুকু সিজদাহ করতে হবে। চার রাকাতের সময় সেজদা দিয়ে উঠে বসে পড়তে হবে (আত্তাহিয়াতু লিল্লাহি উয়াসসালাউয়াতু উয়াত্তাইয়িবাতি আসসালামু আলাইকা আইয়ু হান্নাবিয়ু উউয়া রাহমাতুল্লাহি উয়া বারাকাতুহু আসসালামু আলাইনা আলা ইবাদিল্লাহিস সুয়ালিহিন, আসহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহু উয়া আসহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদু হুয়া রাসুলুহু)।প্রতিয়মান আসহাদু আল্লআহ ইলাহা বলে শাহাদাত আঙ্গুলি উপরের দিকে ধাবমান করতে হবে।
আল্লাহুম্মা সাল্লিয়ালা মুহাম্মাদিউ উয়ালা আলি মুহাম্মাদ কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা উয়ালা আলি ইব্রাহিম ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ।
আল্লাহুম্ম বারিক আলা মুহাম্মাদিউ উয়ালা আলি মুহাম্মাদ কামা বারাক তা আলা ইব্রাহিমা উয়ালা আলি ইব্রাহিম ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ।
আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাছিরা উয়ালা ইয়াগফিরু জুনুবা ইল্লা আনতা ফাগফিরিলি মাগফিরাতাম মিন হিমদিকা উয়ার হামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুররাহিম। বলে সালাম ফিরাবেন। সালাম ফেরানোর সময় প্রথমে ডান দিকে এবং পরে বাম দিকে মস্তক ঘুরাতে হবে।
যোহরের চার রাকাত সুন্নত ও ফরজ নামাজের নিয়ম একই রকম। শুধু নিয়তটা আলাদা। আর আপনারা নামাজ শুরু করার আগে যখন জায়নামাজে উঠবেন তখন শুধু একবার জায়নামাজের দোয়া পড়তে হবে।তারপরে যোহরের নামাজ পুরোটা শেষ করা পর্যন্ত আর জায় নামাজের দোয়া পড়তে হবে না। আর জায় নামাজের দোয়া পড়া ফরজ নয়। আপনি বেশি সওয়াব লাভের আশায় এটি পড়তে পারেন।
যোহরের নামাজ দুই রাকাত সুন্নত ও নফল:
নিয়ত করে রাকাত বাধতে হবে। দুই হাত কাধ বরাবর রাখতে হবে। যেন হাতের তালু দুটি কাবার দিকে থাকে। তারপর হাত নামিয়ে নাভির উপরে কিংবা নিচে বাধতে হবে। এবং পড়তে হবে (সুবহানাকা আল্লাহুম্মা বিহামদিকা উতাওয়া রাকাসমুকা উয়াতায়ালা জাদ্দুকা উয়ালা ইলাহা গাইরুক)।
প্রথম রাকাত
তারপর সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।(আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আররাহমানির রাহিম, মা-লিকিয়াউ মিদ্দিন, ইয়া কানা’ বুদু উয়া ইয়া কানাসতায়িন, ইহদিনাসসিরাতাল মুস্তাকিম, সইরা ত্বাল্লাজিনা আন আম তায়ালাইহিম, ঘাইরিল মাগদু বিয়ালাইহিম, উয়ালাদ্দুয়াল্লিন)। এবং সূরা ফাতিহার পরে অন্য যে কোন একটি সূরা পড়তে হবে।
তারপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। এবং রুকুতে পড়তে হবে।সুবহানা রাব্বিয়াল আযিম।(তিনবার পড়া উত্তম)
সামিয়াল্লাহুলিমান হামিদা বলে রুকু থেকে উঠতে হবে। তারপর আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় পড়তে হবে {সুবহানা রাব্বিয়াল আলা(তিনবার পড়া উত্তম)}। তারপর আল্লাহু আকবার বলে সেজদা থেকে উঠে বসতে হবে এবং আবার সেজদায় যেতে হবে। তারপর আল্লাহু আকবার বলে আবারো দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
দ্বিতীয় রাকাত:
দ্বিতীয় রাকাতেও আগের বারের মতই সূরা ফাতিহা পড়তে হবে এবং তার সাথে অন্য যেকোনো একটি সূরা পড়তে হবে। তারপর ঠিক আগের মতই রুকুতে যেতে হবে এবং রুকু থেকে সেজদায় যেতে হবে। সেজদায় প্রথমবার উঠে আবার সেজদায় যেতে হবে। তারপর সেজদা থেকে উঠে পড়তে হবে (আত্তাহিয়াতু লিল্লাহি উয়াসসালাউয়াতু উয়াত্তাইয়িবাতি আসসালামু আলাইকা আইয়ু হান্নাবিয়ু উউয়া রাহমাতুল্লাহি উয়া বারাকাতুহু আসসালামু আলাইনা আলা ইবাদিল্লাহিস সুয়ালিহিন, আসহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহু উয়া আসহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদু হুয়া রাসুলুহু) প্রতিয়মান আসহাদু আল্লআহ ইলাহা বলে শাহাদাত আঙ্গুলি উপরের দিকে ধাবমান করতে হবে।
তারপর, আল্লাহুম্মা সাল্লিয়ালা মুহাম্মাদিউ উয়ালা আলি মুহাম্মাদ কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা উয়ালা আলি ইব্রাহিম ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ।
আল্লাহুম্ম বারিক আলা মুহাম্মাদিউ উয়ালা আলি মুহাম্মাদ কামা বারাক তা আলা ইব্রাহিমা উয়ালা আলি ইব্রাহিম ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ।
আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাছিরা উয়ালা ইয়াগফিরু জুনুবা ইল্লা আনতা ফাগফিরিলি মাগফিরাতাম মিন হিমদিকা উয়ার হামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুররাহিম। বলে সালাম ফিরাতে হবে। সালাম ফিরানোর সময় প্রথমে ডান দিকে এবং দ্বিতীয়বারে বামদিকে মস্তক ঘুরাতে হবে।
জোহরের নামাজের দুই রাকাত সুন্নত ও নফল নামাজের নিয়ম একই। শুধু নিয়তটা আলাদা।
যোহর নামাজের নিয়ত।
সুন্নত নামাজের নিয়ত: নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-তাআলা আরবাআ রাকয়াতি সালাতিজ জোহরি সুন্নাতু রাসুলিল্লা-হি তায়ালা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
ফরজ নামাজের নিয়ত: নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবাআ রাকয়াতি সালাতিজ জোহরি ফারজুল্লাহি তাআলঅ মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
নফল নামাজের নিয়ত: নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকয়াতাই সালাতিন্নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
মনে রাখবেন নিয়ত মুখে বলা ফরজ নয়। আপনি কখন কোন নামাজ আদায় করতেছেন সেটা মনে মনে নির্ধারণ করে নিলেই নিয়ত হয়ে যাবে।
মোনাজাত
রাব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাওঁ ওয়াফিল আখিরাতি হাছানাতাওঁ ওয়াকিনা আজাবান্নার। ওয়া সাল্লাল্লাহু- তাআলা আলা খাইরি খালক্বিহী মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আ-লিহি ওয়াআছহাবিহী আজমায়ীন। বিরাহমাতিকা ইয়া আরিহামার রাহিমীন।
জোহরের নামাজের সময়
সূর্য মাথার ওপর থেকে পশ্চিমে ঢলে যাওয়ার পর হতে শুরু করে যতক্ষণ পর্যন্ত কোন জিনিসের ছায়া সেই জিনিসের সমান না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত জোহরের সময় (মুসলিম)। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রসূলূল্লাহ (স.) গরমকালে ঠান্ডা হয়ে দেরী করে জোহর পড়তেন এবং শীতকালে জলদি পড়তেন। [নাসায়ি, মেশকাত, ৬২ পৃ:]
তো এই ছিল আজকের আর্টিকেলে। আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা বুঝতে পারবেন যে, জোহরের নামাজ কত রাকাত ও কি কি। কিভাবে জোহরের নামাজ পড়তে হয়।জোহরের নামাজের নিয়ত। নামাজ শেষে পড়ার মোনাজাত। হাদিস মতে জোহরের নামাজের সময়। ভালো থাকবেন দেখা হবে পরবর্তী নতুন কোন আর্টিকেলে। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুক আমিন।