যেসব কারণে রোজা মাকরুহ হয় ?

আপনি যদি রোজা মাকরূহ হওয়ার কারণ জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। বা আপনি যদি যেসব কারণে রোজা মাকরুহ হয় সেসব কারণ সম্বন্ধে জানতে চান তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজকের আর্টিকেলে যেসব কারণে রোজা মাকরুহ হয় বা রোজা মাকরুহ হওয়ার কারণ সমূহ নিয়ে আলোচনা করব।
আজকের আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়লে আপনারা রোজা মাকরুহ হওয়ার কারণ সমূহ জানতে পারবেন।
রমজান মাসে রোজা একটি ফরজ ইবাদত। আমাদের অনেক গুরুত্বের সাথে এই ইবাদতটি পালন করতে হবে। এর আগের আর্টিকেলে আমি রোজা ভঙ্গের কারণ নিয়ে আলোচনা করেছি। আজকে আলোচনা করব রোজা মাকরুহ হওয়ার কিছু কারণ। আমরা অনেক কষ্ট করে রোজা রাখি সওয়াবের আশায় আল্লাহর পছন্দের মানুষ হওয়ার আশায়। তবে এত কষ্ট করে রোজা রাখার পর যদি আমরা তার সম্পূর্ণ বেনিফিট না পাই তাহলে কেমন লাগে বলুন। ঠিক তেমনি হচ্ছে রোজা মাকরুহ হওয়া। রোজা মাকরুহ হলে আপনার রোজা হবে ঠিকই তবে আপনি রোজার সম্পন্ন ফায়দা ও সওয়াব পাবেন না। তাই রোজা রাখলে এ বিষয়ে অনেক সতর্ক থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ
যেসব কারণে রোজা মাকরুহ হয়?
রোজা মাকরুহ হওয়ার কিছু কারণ: এক. মিথ্যা বলা। দুই. মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া। তিন. গিবত করা বা দোষচর্চায় লিপ্ত থাকা। চার. মিথ্যা কছম করা। পাঁচ. অশ্লীল কথা বলা বা অশ্লীল কাজ করা। ছয়. জুলুম করা। সাত. কারো সঙ্গে শত্রুতা রাখা। আট. পরনারীর প্রতি দৃষ্টি করা, তাদের সঙ্গে মেলামেশা করা। নয়. সিনেমা দেখা— সবই নাজায়েজ।
উপরোক্ত কাজগুলো ছাড়া সব গোনাহর কাজ থেকে বিরত থাকা একান্ত জরুরি। কেউ রোজা রেখে এসবে লিপ্ত হলে- রোজা ভাঙে না; তবে মাকরুহ হয় এবং সওয়াব কমে যায়। (বুখারি, হাদিস নম্বর ১৯০৩; জাওয়াহিরুল ফিকহ : খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ৩৭৯; জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২২)
এছাড়াও আরো যেসব কারণে রোজা মাকরুহ হয়। নিচে সংক্ষেপে তা তুলে ধরা হলো।
১.অজু ছাড়া (রোজাদারের জন্য) কুলি করা মাকরুহ। (আল-ওয়াল ওয়ালিযিয়্যাহ : খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ২২৭)
২.কোনোরূপ অপারগতা ছাড়াই কোনো বস্তু আস্বাদন করা বা চর্বণ করা। (শামি : খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ৩৯৫)
৩.অনন্যোপায় ছাড়াই কোনো কিছু চর্বণ করে শিশুর মুখে দেওয়া। (ফাতহুল কাদির : খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৩৪৯)
৪.একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেনাবেচার সময় মধু কিংবা তেলের স্বাদ আস্বাদন করা। (আলমগিরি, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ১৯৯)
৫.মুখে অধিক পরিমাণ থুতু একত্র করে গিলে ফেলা। (বিনায়াহ : খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ২৯৪)
৬.বেশি ক্ষুধা বা পিপাসার কারণে অস্থিরতা প্রকাশ করা। (শামি, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ৪০০)
৭.মাজন, কয়লা, গুল, টুথপেস্ট ব্যবহার করা। (জাওয়াহিরুল ফিকহ : খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৩৭৯)
৮.অহংকারের জন্য সুরমা লাগানো বা গোঁফে তেল লাগানো। (আলমগিরি)
৯.মূত্র ত্যাগের রাস্তায় পানি দ্বারা এত বেশি ধৌত করা যে ভেতরে পানি চলে যাওয়ার আশঙ্কা হয়। (আলমগিরি : খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ১১৯)
১০.প্রয়োজন ছাড়া ডাক্তারের মাধ্যমে দাঁত তোলা মাকরুহ। তাতে যদি রক্ত বা দাঁতে লাগানো ওষুধ পেটে চলে যায়, যা থুতুর সমপরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। (আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৪২৬)
১১.স্ত্রী-মিলন বা বীর্যপাতের আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও স্ত্রীকে চুমু দেওয়া। (আলমগিরি : খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ২০০)
১২.এমন কোনো কর্ম করা, যা শরীরকে দুর্বলতার দিকে নিয়ে যায়, তা মাকরুহ। (শামি : খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ৪০০)
আরও পড়ুন: অযুর দোয়া ও নিয়ত
শেষ কথা
উপরোক্ত কারণগুলো যদি আপনাদের ঘটে যায় তাহলে আপনাদের রোজা মাকরুহ হবে। আমাদের সতর্কতার সাথে রোজা পালন করা উচিত। কষ্ট করে না খেয়ে থেকে কেন পরিপূর্ণ ফায়দা আমরা নিবো না। সামনে রমজান মাস আসতেছে। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে সম্পূর্ণ ভালোভাবে প্রতিটি রোজা রাখার তৌফিক দান করুন, আমীন।